আয়রন লেডি খ্যাত প্যারিসের শা দে মারস (Champ de Mars, 5 Avenue Anatole, 75007 Paris, France 🇫🇷) এঅবস্থিত আইফেল টাওয়ারকে ফরাসিরা বলে লা তুর্ ইফেল্ (La Tour Eiffel)। আইফেল টাওয়ার পুরোটাই ধুমপানমুক্ত। এইসুউচ্চ লৌহ কাঠামো ফ্রান্সের সর্বাধিক পরিচিত প্রতীক হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। আমেরিকার লাস ভেগাস (নেভাদা), মেক্সিকোরডুরাঙ্গো, চীনের শেনঝেন সহ পৃথিবীর বহু দেশে রয়েছে আইফেল টাওয়ারের প্রতিকৃতি। ১৯৩০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ক্রাইসলার ভবন তৈরির পূর্ব পর্যন্ত আইফেল টাওয়ারই ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। প্যারিস শহরে নির্মিতআইফেল টাওয়ারটি পৃথিবীর স্থাপত্য ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনার জন্ম দেয়। ১৮৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার যখন ফরাসিবিপ্লবের শর্তবাষিকী পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, তখন সেই আয়োজনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই প্রতীকি মিনারটি তৈরিরসিদ্ধান্ত নেয়। ফরাসি স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হলেও নির্মাণের শুরুতে ব্যাপক বাঁধার মুখে পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে। শহরেরসৌন্দর্য বিনষ্টের চক্রান্ত হিসেবে দেখা হয় বিষয়টিকে। প্যারিসের অধিবাসীরা মোটেও পছন্দ করেননি টাওয়ারটিকে। নির্মাণের পরেউঁচু এ স্থাপনাটি অনেকেরই চক্ষুশূল হয়ে দেখা দিয়েছিল। তারা একে শহরের অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনেকরেছিলেন। এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের প্রথম শ্রেণীর শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীগণ যথেষ্ট সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় তোলেন। ‘এযেন এক দৈত্য-শহরের লজ্জা’ এমন সব বাণীতে রীতিমতো ‘আইফেল টাওয়ার হটাও’ আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিলো। শুরুতেএর কদর না বুঝলেও দিনে দিনে এর গুরুত্ব বেশ ভালোই বাড়ে ফরাসিদের কাছে। নির্মাণকালীন পরিকল্পনায় টাওয়ারটি নির্মিতহয়েছিল বিশ বছরের জন্য। বিশ বছর পর সেটি খুলে নেয়ার সেই পরিকল্পনা আর কার্যকর হয়নি৷ কারণ ততদিনে আইফেলটাওয়ারের খ্যাতি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ দলে দলে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন এই লৌহ মানবী খ্যাত আইফেল টাওয়ারদেখতে। ১৯০৯ সালে প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষ এই টাওয়ারটি রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আজ আইফেল টাওয়ার প্যারিস শহরের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে গোটা বিশ্বে পরিচিত। আগাগোড়া লোহায় তৈরি হবার কারণেইস্থানীয় মানুষ এই টাওয়ারকে ‘আয়রন লেডি’ বা লৌহমানবী বলে ডাকেন ৷ সুউচ্চ এই মিনারটির উচ্চতা ৩২৪ মিটার অর্থাৎ১০৬৩ ফুট। শুরুতে ৩০০ মিটার উচ্চতায় বিশ্বে মানুষের তৈরি সবচেয়ে উঁচু কোনো সৃষ্টি ছিলো এই টাওয়ার ৷ ১৯৫৭ সালেটাওয়ারের চূড়ায় অ্যান্টেনা বসানোর পর উচ্চতা দাঁড়ায় ৩২৪ মিটার৷ এটি ৮১ তলা ইমারতের সমান উচ্চতা বিশিষ্ট। টাওয়ারেরভিত্তিটি বর্গাকৃতির। প্রতিটি বাহু ১২৫ মিটার অর্থাৎ ৪১০ ফুট চওড়া। আইফেল টাওয়ারের ওপরে তিনতলা বা স্তর পর্যন্তদর্শনার্থীরা যেতে পারে। প্রথম ও দ্বিতীয় তলাতে রয়েছে রেস্টুরেন্ট। তৃতীয় তলা পর্যন্ত উচ্চতা ২৭৪ মিটার অর্থাৎ ৯০৬ ফুট।৭,৩০০ টন ইস্পাত দিয়ে তৈরি হয়েছে এই টাওয়ার৷ ১৮,০৩৮ খণ্ড লোহার তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ছোট-বড় কাঠামো জোড়া দিয়েএই টাওয়ার তৈরি করা হয়েছে। ৩০০ শ্রমিক এই নির্মাণ যজ্ঞে অংশ নেয়। আইফেল টাওয়ারের ওজন প্রায় দশ হাজার টন।টাওয়ারটিতে কোনো নির্দিষ্ট রং ব্যবহার করা হয়নি। আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করার জন্য টাওয়ারটির উপরের অংশে কিছুটা গাঢ়রং ব্যবহার করা হয়। তবে নিচের দিকে ক্রমান্বয়ে হালকা রং ব্যবহার করা হয়। টাওয়ারটিকে মরিচার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রতিসাত বছর পর পর রং করা হয়। এতে ৬০ টন রং ব্যবহার করা হয়, সম্পূর্ণভাবে রঙ করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যায়।
ঋতুর ভিত্তিতে এর উচ্চতা পরিবর্তিত হয়। রড আয়রন দিয়ে নির্মিত হওয়ার কারণে টাওয়ারটির ধাতব পদার্থ বিভিন্ন ঋতুতেতাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড়-ছোট হয়। উষ্ণতার কারণে গ্রীষ্মকালে এর দৈর্ঘ্য বৃ্দ্ধি পায়। তাই সূর্যের তাপে দিনেরবেলা আইফেল টাওয়ারের আকার ৬.৭৫ ইঞ্চি বেড়ে যায়। ঝড়ো হাওয়ায় এটি সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কাঁপতে পারে! ২বছর ২ মাস ৫ দিন সময়ে তৈরি হয় শহরের দৃষ্টিনন্দন এ সৌন্দর্য্যের প্রতীক। সেই সময়ে এই টাওয়ারের নির্মাণশৈলী, সিভিলইঞ্জিনিয়ারিং ও স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের সূচনা করেছিলো। সেই সাথে আরেকটি প্রযুক্তিও বিকশিত হয় এই টাওয়ারনির্মাণের হাত ধরে তা হলো- ফটোগ্রাফি। টাওয়ারটি নির্মাণের সময় বহু ফটোগ্রাফার এর নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ের ছবি তুলেরাখেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ছবিগুলো প্রকাশিত হয় যা সেই সময়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।
১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি শুরু টাওয়ারটির নির্মাণ কাজ। পিলার গুলো তৈরি হয় ১৮৮৭ সালের ১ জুলাই। ১৮৮৮ সালের ১এপ্রিল ফাস্ট ফ্লোর। ১৮৮৮ সালের ১৪ আগষ্ট সেকেন্ড ফ্লোর এবং ১৮৮৯ সালের ৩১ মার্চ মাত্র দুই বছর, দুই মাসে টাওয়ারটিরনির্মাণ কাজ শেষে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এতো অল্প সময়ে নান্দনিক সুউচ্চ এ টাওয়ারটি নির্মাণ কাজহওয়ায় সকলের নজর কেড়েছিলো। এই টাওয়ারের নির্মাণ কাজটি পূর্তবিদ্যা ও স্থাপত্যশিল্পের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের সূচনাকরেছিলো। টাওয়ারটির চূড়া থেকে পুরো প্যারিস শহর এক নজরে দেখে নেওয়া যায়। দুই একর ভূমিজুড়ে বিস্তৃত টাওয়ারটিতেআছে অর্ধবৃত্তাকার চারটি তোরণ। টাওয়ারটির নিচ থেকে উপরে ওঠানামার জন্য রয়েছে ১,৬৬৫টি ধাপের সিঁড়ি। দর্শনার্থীদেরজন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে ৫টি লিফট বা এলিভেটর। খুব দ্রুত সময়ে চূড়ায় ওঠার আধুনিক পদ্ধতি ১৯৮৩ সালেপর্যটকদের সুবিধার জন্য চালু হয়। লিফট স্থাপনের সময় টাওয়ারের সিঁড়ির বেশকিছু অংশ সরিয়ে ফেলতে হয়। এরপর এসিঁড়ির দু’টি খণ্ড প্যারিসের ওরসে মিউজিয়াম ও সিটি অব সায়েন্সেস মিউজিয়ামে রাখা হয়। এছাড়াও এই সিঁড়ির অংশ রয়েছেআমেরিকার নিউ ইয়র্কের ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’র পাশে, ফ্লোরিডার ‘ডিজনিল্যান্ডে’, ও জাপানের ইয়োইশি ফাউন্ডেশনের বাগানে৷সংগ্রহে থাকা আইফেল টাওয়ারের সিঁড়ির অংশগুলো মাঝে মধ্যে আকাশচুম্বি দামে নিলামে ওঠে, পৃথিবীর ধনী শিল্পসংগ্রাহকেরা এসব নিলামে অংশ নেয়। সম্প্রতি এ রকম একটি অংশ তৃতীয় ও চতুর্থ তলার সংযোজক সিঁড়ি বিক্রয়ের জন্যপ্যারিসের বিখ্যাত উদ্যান শঁজেলিজেতে ফরাসি নিলামঘর আর্টক্যুরিয়াল ২০ দিন ধরে প্রদর্শনের পর নিলামে তোলে। নিলামসংস্থা আর্টক্যুরিয়াল ধারণা করেছিল এবার সিঁড়ির টুকরো বিক্রি হবে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ডলারে। সবার ধারণা পাল্টেদিয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ইউরোতে এটি লুফে নেন মধ্যপ্রাচ্যের এক ক্রেতা।
উত্তর দিকে পিলারের কাছে গুস্তাভ আইফেলের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। পশ্চিম পিলারের কাছে রয়েছে তথ্যকেন্দ্র। টাওয়ার সম্পর্কেযাবতীয় তথ্য এখান থেকে দেয়া হয়। ভিজিটর ইনফরমেশন বুথের কাছে রয়েছে বুটিক প্রতিষ্ঠান “The Rendez Vous” লাইনেদাঁড়াতে গিয়ে ক্ষিধে পেলে হাল্কা খাবারের দোকান রয়েছে নিচে। বিভিন্ন রকমের পানীয় রয়েছে যা শিশুদের খুব প্রিয়। বিভিন্নরকমের সুভ্যেনীর এবং গিফট সামগ্রীর দোকান রয়েছে পূর্বদিকের পিলারের কাছে। নাম The Kiosk Boutique”।
টাওয়ারটিকে দর্শনার্থীদের জন্য তিনটি স্তরে ভাগ করা দেয়া হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে রেস্টুরেন্ট আর তৃতীয় স্তরে রয়েছেপর্যবেক্ষণাগার (Observatory Deck)। তৃতীয় স্তরের এই জায়গা হতে রাতের প্যারিস শহর অবলোকন করার অনুভূতিই যেনঅন্যরকম, এর মোহনীয় রূপে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায়না, রীতিমত রোমাঞ্চকর। আলোকে আলোকময়, দৃষ্টিনন্দন চমৎকার সেদৃশ্য। একদল নামছে তো আরেক দল উঠে আসছে। সবাই প্যারিসের মোহনীয়রূপ ক্যামেরাবন্দি করায় তৎপর। চারদিকেঅনেকক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখলাম পুরো শহরটাকে। আলোয় ঝলমল করা সন্ধ্যার প্যারিস স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর।
১৮৮৯ সালে এই টাওয়ার তৈরির সময় তার রূপকার গুস্তাভ আইফেল চেয়েছিলেন টাওয়ারের রং হোক লাল। তাঁর যুক্তি, লালরংয়ে মর্চে ধরবে কম। ১৮৯২ সালে এটির রং হয় হালকা কমলা। ১৮৯৯ সালে আইফেল টাওয়ারের তলার দিকে কমলা হলুদআর উপরের দিকে হালকা হলুদ রং করা হয়। ১৯০৭ থেকে ১৯৫৪ পর্যন্ত এটির রং হয় হলদেটে বাদামি। ১৯৬৮ সালে হয় বাদামিলাল। এখন টাওয়ার বিশেষভাবে তৈরি বাদামি রংয়ে সাজানো।
প্রথম মহাযুদ্ধের সময় এ টাওয়ারটি বেতার তরঙ্গ সম্প্রচার করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফরাসিসেনাবাহিনী নাৎসি বাহিনীর আগমনের আগে এর লিফটের তার কেটে দিয়েছিল। নাৎসিরা যেন টাওয়ারটি ব্যবহার করতে নাপারে, সে জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। ১৯৫৬ সালের ৩ জানুয়ারি টাওয়ারের ঊর্ধভাগ আগুনে পুড়ে বিনষ্ট হয়। ২০০৩সালের ২২ জুলাই টাওয়ারের সম্প্রচার কক্ষে আগুন ধরে যায়। ৪০ মিনিট পর সম্পূর্ণ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তাছাড়া ফরাসিবিপ্লবের শত বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে নির্মিত এই টাওয়ারটি আয়োজন শেষ হওয়ার ২০ বছর পর সেটি আবার খুলে নেয়ারপরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্থবায়ন হয়নি। সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ১৩০ বছর ধরে স্বগৌরবে টিকে আছে এ লৌহ মানবী৷
বিশ্বসেরা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি পাওয়া আইফেল টাওয়ার, অর্থের বিনিময়ে দেখা স্থাপনার শীর্ষে রয়েছে। কালের পরিক্রমায়সৌন্দর্য্যের প্রতীক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব পর্যটকদের অন্তরে। অন্য স্থাপনাগুলোর তুলনায় এখানে প্রতি বছর বিশ্বেরসবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী ঘুরতে আসে। প্রতি বছর এ টাওয়ার দেখতে ৭ মিলিয়ন দর্শনার্থী আসেন, যাদের ৭৫ ভাগই আসেনবিদেশ থেকে।
এটি শুধু পর্যটনকেন্দ্রই নয় এখানে রয়েছে একটি সংবাদপত্র অফিস। এছাড়াও এতে রয়েছে পোস্ট অফিস, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারও থিয়েটার। ২০০৪ সাল হতে প্রতি বছর টাওয়ারের প্রথম তলায় আইস স্কেটিং খেলার আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
১৯২১ সালে ফ্রান্সের প্রথম পাবলিক রেডিও সম্প্রচারও শুরু হয়েছে এই টাওয়ার থেকে। রেডিও সম্প্রচার ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ারহিসেবেই বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে আইফেল টাওয়ার।
কখনও নিরাপত্তাজনিত কারণে, কখনওবা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে আইফেল টাওয়ার বেশ কয়েকবার পর্যটকদের জন্য বন্ধ রাখাহয়।
হামলার কবল থেকে ঐতিহ্যের আইফেল টাওয়ারকে রক্ষা করতে এই নান্দনিক এই স্থাপত্যের চারপাশে ২.৫ মিটার (প্রায় ৮ ফুট) উঁচু (বুলেটপ্রুফ) কাচের দেয়াল দেয়া হয়েছে। এর পূর্বে উঁচু এই লৌহ-স্থাপত্যের চারপাশে লোহার বেড়া দেয়া হয়েছিলো।বুলেটপ্রুফ কাঁচ ৬ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার মোটা৷
টাওয়ারের দুই দিক বাঁকানো ধাতুর কাঁটা দিয়ে দেয়াল দেয়া হয়েছে। এই দেয়াল ৩ দশমিক ২৪ মিটার উঁচু। এখন খুব সহজেইটাওয়ারটি নিচে যাওয়া যায় না। একসময় পর্যটকরা কোনও বাঁধা ছাড়াই সরাসরি এই অত্যাশ্চর্য আইফেল টাওয়ারের কাছেপৌঁছাতে পারতো৷ কিন্তু ২০১৫ সালের পর থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারে ফ্রান্স এখন খুবই কঠোর৷ মূলত, ফ্রান্স সহ ইউরোপেরবিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে সব স্থাপত্য ও দর্শনীয় জায়গাগুলির নিরাপত্তা জোরদারকরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো।
গগনস্পর্শী উচ্চতা ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর জন্য আইফেল টাওয়ার পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। সন্ত্রাসী হামলাথেকে রক্ষা পেতে ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের চারপাশ বুলেটপ্রুফ বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। টাওয়ারের বৈচিত্রতার সমন্বয় রেখেবুলেটপ্রুফ দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়। এই ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে খুশি পর্যটকরাও। তবে আগেকার খোলামেলা পরিবেশআর থাকবে না, এটাও মন খারাপ করিয়ে দিচ্ছে অনেকেরই।
ফ্রান্সে বিশেষ দিবস কিংবা বিজয় উদযাপনে আইফেল টাওয়ারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ইউনেস্কোকে(UNESCO) সহায়তা করতে ১৯৯৫ সালের ১৪ জুলাই জিন মাইকেল জার ‘’Concert For Tolerance’’ নামক একটিকনসার্টের আয়োজন করেন। সেখানে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটে। ১৯৯৯ সালে আইফেল টাওয়ারে প্যারিসের সহস্র বর্ষউদযাপিত হয়। এই উপলক্ষে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ টাওয়ারটি আলোকোজ্জ্বল করা হয়। ২০০৮ সালে ফ্রান্স ইউরোপীয়ইউনিয়নের দ্বিতীয়বারের মত সভাপতিত্ব পাওয়ায় আইফেল টাওয়ারে ১২টি দেশের পতাকা লাগানো হয় এবং নীল আলোয়সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দেয়া হয়। ১৯৯৮ কিংবা ২০১৮ সালে শেষ হওয়া রাশিয়ায় ২১তম ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ বিজয়ের ছোঁয়াও লাগেআইফেল টাওয়ারে। ফ্রান্সে যেকোন আনন্দ উদযাপনে সবাই তাকিয়ে থাকে আইফেল টাওয়ারের দিকে।
আইফেল টাওয়ার, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত প্রতি ঘন্টায় ৫ মিনিটের জন্য আলোয় ঝলমল করে ওঠে। টাওয়ারটিরআলোকসজ্জায় প্রায় ৩৩৬টি প্রজেক্টর এবং ২০,০০০টি বাল্ব (প্রতি পাশে ৫,০০০ টি বাল্ব) ব্যবহার করা হয়।
১৯৮৫ সাল থেকে, ৩৩৬টি সোডিয়াম-বাষ্প আলোয় নিয়মিত আলোকিত হচ্ছে আইফেল টাওয়ার। আলোক প্রকৌশলীPierre Bideau দ্বারা ডিজাইন করা এই অনন্য সিস্টেমটি আইফেল টাওয়ারকে একটি সুন্দর হলুদ-কমলা রঙে রঙিন করেচকচকে গহনার দেখায়।
আলবার্তো সান্তোস ডুমন্ট তার এয়ারশিপে সেন্ট-ক্লাউড ছেড়ে আইফেল টাওয়ারের চারপাশে উড়ে যাওয়ার এবং 30 মিনিটেরমধ্যে ফিরে আসার কীর্তি অর্জন করেছিলেন। এই অর্জনের ফলে এক লক্ষ ফ্রাঙ্কের পুরস্কার জিতেছিলেন যা ১৯০০ সালে প্রথমপাইলটকে এই কর্মক্ষমতা অর্জনের জন্য পুরস্কৃত করা হয়।
নব নব ইতিহাস তৈরিতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে আইফেল টাওয়ারের নাম। জনমানুষকে সচেতনতার বার্তাও এখন আইফেলটাওয়ার দিয়ে যাচ্ছে। গত অক্টোবরে #PinkOctober-এর সমর্থনে এবং স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মানুষের মধ্যেসচেতনতা সৃষ্টিতে সমস্ত টাওয়ার গোলাপী রং ধারণ করেছিলো।
আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনবদ্য এ সৃষ্টি শিল্প ও বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে এখন সমাদৃত। স্থপতি স্টিভেন সাভেস্টার(Stephen Sauvestre), চিফ ইন্জিনিয়ার যথাক্রমে মোরিস কোকলিন (Maurice Koechlin), এমিল নুগাইয়ার (Emile Nouguier) টাওয়ারের অপরূপ এই নকশাটি তৈরি করেন।
নির্মাণ করেন গুস্তাভ আইফেল্ ও চিয়ে। গুস্তাভ আইফেলের নামানুসারে টাওয়ারটির নামকরণ করা হয়। তার কোম্পানিই এটাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিলো।
প্যারিস শহর কর্তৃপক্ষের মালিকানায় এই টাওয়ারটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সোসাইতে দে এক্সপ্লোইসেসিও দে লা তুরইফেল (Société d’Exploitation de la Tour Eiffel – SETE)