লেবাননের উত্তরাঞ্চলীয় বিশারি শহরে কবি ও লেখক কাহলিল জিবরানের লেখা বিখ্যাত বই ‘দ্য প্রফেট’-এর শতবর্ষ উদ্যাপন করা হচ্ছে। বিশারি জিবরানের জন্মশহর। সেখানকার পাহাড়ি এলাকায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গড়ে ওঠা একটি জাদুঘরে ‘দ্য প্রফেট’-এর শতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে।
১৮৮৩ সালে লেবাননের বিশারিতে জিবরানের জন্ম। লেবানন তখন অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। ১২ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। জিবরান তাঁর বেশির ভাগ বই লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
সেখানে তিনি নিউইয়র্ক পেন লিগের নেতৃত্বে ছিলেন। নিউইয়র্ক পেন লিগ হলো সর্বপ্রথম গঠিত আরব-আমেরিকান সাহিত্যসমাজ। ১৯২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ‘দ্য প্রফেট’ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তখন থেকে বিশ্বজুড়ে বইটির লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। বইটির মূল কপি ইংরেজি ভাষায় লেখা। পরে বেশ কিছু ভাষায় তা অনূদিত হয়েছে।
জাদুঘরটির পরিচালক জোসেফ গিয়াগিয়া বলেন, পাঠকেরা যে যেখান থেকেই আসুন না কেন; তাঁরা খ্রিষ্টান, মুসলিম, ইহুদি কিংবা অবিশ্বাসী—যাই হোন না কেন, প্রত্যেকেই মনে করেন, বইটি তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এটি তাঁদের মনে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
জোসেফ গিয়াগিয়া আরও বলেন, এটি প্রত্যেকের আধ্যাত্মিক মনকে ছুঁয়ে যায়। মৃত্যু, জীবন, বন্ধুত্ব, প্রেম, সন্তান এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে বোঝাপড়া তৈরি করে।
গদ্যকাব্য সংকলন ‘দ্য প্রফেট’-এ ২৬টি অধ্যায় আছে। গ্রন্থটি থেকে বিভিন্ন চরণ প্রায়ই বিশ্বজুড়ে জন্মদিন, বিয়ে এবং শেষকৃত্যানুষ্ঠানে পাঠ করা হয়।
লেবাননের লেখক আলেক্সান্দ্রে নাজ্জার সম্প্রতি বৈরুতে বইটি পাঠ করে শোনান। তিনি বলেন, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে ‘দ্য প্রফেট’ বইটি শিক্ষার্থী ও হিপ্পিদের হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল
নাজ্জার আরও বলেন, এলভিস প্রিসলি বইটি এতটাই পছন্দ করতেন যে তিনি বন্ধুদের জন্মদিনে এটি উপহার দিতেন। বিশেষ করে একটি বাক্য তাঁদের বেশি আকৃষ্ট করেছিল। তা হলো—‘তোমাদের সন্তান তোমাদের সন্তান নয়…তারা তোমাদের মাধ্যমে এসেছে, তোমাদের থেকে আসেনি।’
জাদুঘরের পরিচালক জোসেফ গিয়াগিয়ার তথ্য অনুসারে, বিশ্বখ্যাত গায়ক জন লেনন, জাপানের সাবেক সম্রাট মিচিকো এবং ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও বইটি পছন্দ করতেন।
১৯৩১ সালে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান জিবরান। তাঁকে বিশারিতে সমাহিত করা হয়।
বিশারির জাদুঘরের পরিচালক গিয়াগিয়া বলেছেন, প্রতিবছর ৫টি মহাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার দর্শনার্থী সেখানে আসেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরেও ‘দ্য প্রফেট’ বইয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল।