প্যারিস শহরের সৌন্দর্যের স্মেইল
আয়রন লেডি খ্যাত লা তুর ইফেল (La Tour Eiffel)
আলেক্সঁদ্র গুস্তাভ আইফেল
Alexandre Gustave Bönickhausen dit Eiffel
বিখ্যাত প্রকৌশলী আলেক্সঁদ্র গুস্তাভ আইফেলকে বেছে নেয়া হলো আইফেল টাওয়ার নির্মাণের কাজে। তিনি পেটা লোহার খোলা জাফরি (Open lattice) দিয়ে নান্দনিক উঁচু এই নিখুঁত ও চমৎকার মিনারটি নির্মাণ করেন। শুধু আইফেল টাওয়ারই গুস্তাভ আইফেলের একমাত্র সৃষ্টি নয়, এই প্রতিভাবান শিল্পীর হাত ধরে স্ট্যাচু অব লিবার্টি সহ অসংখ্য শিল্প স্থাপনা তৈরি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় আইফেল টাওয়ার। এই টাওয়ার ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত। আলেক্সঁদ্র গুস্তাভ আইফেল (Alexandre Gustave Eiffel) ফরাসি ভাষায় নামটির উচ্চারণ হয় “এফেল”। ১৮৩২ সালের ১৫ ডিসেম্বর ফ্রান্সের কোত-দর (Côte d’Or) অঞ্চলের দিজোঁ শহরে (Dijon city) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফরাসি বাস্তু প্রকৌশলী ও স্থপতি হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর পৃথিবী ছাড়েন গুস্তাভ আইফেল। তাঁকে সমাহিত করা প্যারিসের কাছাকাছি লেভালোইস-পেরেটের (Grave of the Eiffel family at the cemetery of Levallois Perret) আইফেল পরিবারের সমাধিস্থলে (Cemetery located in Hauts-de-Seine, in France)।
পিতা- আলেক্সঁদ্র আইফেল, মাতা-কাতরিন মালিনি আইফেল। পিতা-মাতার প্রথম সন্তান ছিলেন আলেক্সঁদ্র গুস্তাভ আইফেল। তাঁর বাবা ফরাসি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। গুস্তাভ আইফেলের জন্মের কিছুদিন পরেই তিনি সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে দেন এবং তাঁর মাকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করেন। তাঁর মা ছিলেন একজন কয়লা ব্যবসায়ী, যেটি তিনি তার উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। বাবা-মা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটে তার দাদির সাথে। আলেক্সঁদ্র গুস্তাভ আইফেল ছিলেন জঁ-রনে বংশের বংশধর, যাঁরা ১৮ শতকের দিকে জার্মানি থেকে ফ্রান্সের প্যারিসে পাড়ি জমায়। বংশপরম্পরায় তাঁরা আইফেল নামটি ব্যবহার করে আসছে। তিন মেয়ে, দুই ছেলের জনক গুস্তাভ আইফেলের দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন মারিয়া (Marguerite Gaudelet)।
প্যারিসের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করেন গুস্তাভ আইফেল। তিনি প্রকৌশল বিদ্যা ছাড়াও রসায়ন বিদ্যাতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। লেখাপড়া শেষে কর্মজীবনে গুস্তাভ আইফেলের প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ বর্দো সেতু। রেল প্রকৌশলী চার্লস ন্যাপভিউ এর সংস্পর্শে এসে নিজেকে আবিষ্কার করেন। চার্লস ন্যাপভিউই প্রথম তাঁকে একটি বেসরকারি সংস্থায় তার সহকারি হিসেবে বেতনভুক্ত চাকরি প্রদান করেন। তার কিছুদিন পর চার্লস ন্যাপভিউ এর কোম্পানি আর্থিক লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ন্যাপভিউ গুস্তাভ আইফেলকে ক্ষতির মুখে পড়তে দেননি। তিনি তাঁকে একটি রেলসেতু নির্মাণের দায়িত্ব প্রদান করেন। গুস্তাভ আইফেল অত্যন্ত সুচারুভাবে তাঁর এই সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন পুরো ফ্রান্সে নিজের কর্মদক্ষতায়। একজন সফল প্রকৌশলী এবং স্থপতি হিসেবে আজও তিনি সকলের স্মৃতিতে অমর হয়ে আছেন। স্থাপত্যবিদ্যা এবং প্রকৌশলী পেশা থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি আবহাওয়া বিদ্যা এবং বায়ু গতিবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করেন এবং উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ অনেক অবদান রাখতে সক্ষম হন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত সুবিশাল স্ট্যাচু অব লিবার্টি (ফরাসি: La liberté éclairant le monde) নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন গুস্তাভ আইফেল। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে উপহার দেয়া ভাস্কর্যটি এখন আমেরিকার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই শহরের কিছু প্রতীক রয়েছে সেই হিসেবে প্যারিসের আইফেল টাওয়ার যেমন প্যারিস শহরের প্রতীক তেমনি নিউইয়র্ক তথা আমেরিকার প্রতীক হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত স্ট্যাচু অব লিবার্টি। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব প্রদর্শনীতে ( 1889 Exposition Universelle) প্যারিসকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্যই মূলত আইফেল টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। মোরিস কোকলিন এবং এমিল নুগাইয়ার সর্বপ্রথম এই টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। মে, ১৮৮৪ সালে মোরিস কোকলিন তাঁর বাসায় আইফেল টাওয়ারের স্কেচচিত্র আকঁতে বসেন। তিনি পরিকল্পনা করেন যে, “টাওয়ারটি চার স্তম্ভ বিশিষ্ট একটি ভিত্তির উপর স্থাপিত হবে, যেটি ধীরে ধীরে উপরের দিকে অগ্রসর হওয়ার পাশাপাশি সরু হতে থাকবে।” তারপর কোকলিন তাঁর নকশা নিয়ে বিভিন্ন স্থপতিদের সাথে আলোচনা করেন। অবশেষে তিনি মিলিত হন গুস্তাভ আইফেলের সাথে। তিনি নকশা দেখামাত্রই এর প্রশংসা করেন এবং এই টাওয়ার নির্মাণে রাজি হয়ে যান। তারপর তিনি এই নকশায় অনেক পরিবর্ধন ও পরিমার্জন আনেন। ১৮৮৪ সালে প্রথম আইফেল টাওয়ারের নকশা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয় । ২৮ জানুয়ারি ১৮৮৭ সালে আইফেল টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ধাতব কাঠামোর বিশেষজ্ঞ গুস্তাভ আইফেলের কর্মযজ্ঞ দিন দিন বিস্তার লাভ করে। আইফেল টাওয়ার ছাড়াও বিশ্বের বেশ কিছু স্থাপনায় যুক্ত হয় গুস্তাভ আইফেলের নাম। এছাড়াও ১৯০০ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত পানামা খাল নির্মাণের সাথে জড়িত ছিলেন। মোরিস কোকলিন প্রথম টাওয়ারটির নকশা আঁকেন পুরো দুনিয়াজুড়ে গুস্তাভ আইফেলের কারুকাজ ছড়িয়ে আছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজ হলো- আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower)
স্ট্যাচু অব লিবার্টি (Statue of Liberty)
আইফেল মার্কেট বা Mercado Adolpho Lisboa
সান সেবাস্টিয়ান চার্চ (San Sebastian Church, Manila, Philippines)
জেনারেল পোস্ট অফিস (The General Post Office, Ho Chi Minh City, Vietnam)
প্যারাডিস ল্যাটিন (Paradis Latin, Paris)
প্যালাসিও ডি হিয়েরো (Palacio de Hierro, Orizaba Veracruz, Mexico)
প্যালাসিও ডি ফেরো (Palácio de Ferro, Luanda, Angola) মারিয়া পিয়া ব্রিজ (Maria Pia Bridge)
লং বিয়েন ব্রিজ (Long Bien bridge, Hanoi, Vietnam)
Birsbrücke, Münchenstein, Switzerland
বোর্দোর কাছে গ্যারোনে নদীর সেতু (Garonne River Bridge near Bordeaux)
আইফেল ব্রিজ (The Eiffel Bridge in Viana do Castelo’s Marina)
রেলওয়ে সেতু (The Railway Bridge over the Coura river in Caminha, Portugal.)
ট্রুং তিয়েন সেতু (Truong Tien Bridge is reflected in the Huong River, Huc, Viet Nam)
টেমস শেল্ডে (Bridge over the Schelde in Temse, in Belgium)
ফ্রান্সের ভেন্ডিতে লাভাউডে লে নদীর উপর রাস্তা (D50) সেতু (The road (150) bridge over the River Lay at Lavaud in the Vendee, France)
কম্বিয়ার ডিস্টিলারি, সাউমুর (লোয়ার ভ্যালি) (Combier Distillery, Saumur (Loire Valley), France)
সিওলে নদীর উপর ভায়াডাক্ট (Viaduct over the Sioule river)
নটর ডেম ডেস চ্যাম্প (Notre Dame des Champs, Paris)
ডিপেতে সুইং ব্রিজ (Swing bridge at Dieppe)
লা পাজ ( Gasworks of La Paz, Bolivia)
লা পাজ ট্রেন স্টেশন (La Paz Train Station, La Paz, Bolivia (now Bus Station of La Paz)
তাকনা চার্চ (Church at Tacna, Peru)
আরিকা চার্চ (Church in Arica, Chile)
রুহনু বাতিঘর (Ruhnu Lighthouse at Ruhnu island, Estonia)
হোটেল ট্রায়ান (Hotel Traian, Romania)
বলিভার ব্রিজ (Bolivar Bridge, at Arequipa, Peru)
ফেনিক্স থিয়েটার (Fenix Theatre, at Arequipa, Peru) সান ক্যামিলো মার্কেট (San Camilo Market, at Arequipa, Peru)
সান্তা রোসালিয়া (Church at Santa Rosalía, Baja California Sur)
কনক পিয়ার (Konak Pier, Turkey)
Estación সেন্ট্রাল (প্রধান ট্রেন স্টেশন) Santiago, Chile
টিসজা সেতু (Bridge over the Tisza near Szeged, Hungary) ফারোল ডি সাও থোমে (Farol de São Thomé in Campos, Brazil)
ওয়েস্টার্ন ট্রেন স্টেশনের কাঠামো (The framework of the Western Train station in Budapest, Hungary)
গ্রেট ব্রিজ (Great bridge over the Begej in Zrenjanin, Serbia)
মোনা দ্বীপের বাতিঘর (Mona Island Lighthouse at Mona Island, Puerto Rico)
প্লাজা দেল মারকাডো (Plaza del Mercado (local produce market) at Mayagüez, Puerto Rico)
ট্রজিলো আল্টোতে ব্রিজ (Bridge in Trujillo Alto )
পুয়েন্তে কুইজন বা কুইজন ব্রিজ (Puente Quezon (Quezon Bridge) over Pasig River, Manila, Philippines)
মাপুটো ইস্পাত ঘর (House of Steel in Maputo, Mozambique)
আজফেল ব্রিজ (Ajfel Bridge On Skenderija Sarajevo, Bosnia and Herzegovina)
হোটেল নেগ্রেস্কো (Dome (Salon Royale) of Hotel Negresco, Nice, France)
লা রোসা পিরিয়াপোলিস (Pabellon de la Rosa Piriapolis, Uruguay)